এপিডার্মিস (বা বহিঃত্বক)-এর কোষসমূহঃ
কাজের ভিন্নতা অনুযায়ী Hydra-র এপিডার্মিসের কোষের গঠনে বৈচিত্র্য দেখা যায়। একটি পাতলা ও নমনীয় কিউটিকল (cuticle)-এ আবৃত এপিডার্মিস Hydra-র বহিরাবরণ গঠন করে। Hydra-র এপিডার্মিস ৭ ধরণের কোষ নিয়ে গঠিত। যথাঃ
১. পেশি-আবরণী কোষ (Musculo-Epithelial cell): এপিডার্মিসের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে এ কোষ অবস্থান করে। বহির্মুখী চওড়া ও অন্তর্মূখী সরু প্রান্তবিশিষ্ট এ কোষগুলো দেখতে কোণাকার। এগুলোর চওড়া প্রান্ত গহ্বরযুক্ত সাইটোপ্লাজোম পূর্ণ, মিউকাস-বস্তুযুক্ত এবং পরস্পর মিলিত হয়ে একটি অভিন্ন আবরণ গঠন করে। ভিতরের সরু প্রান্তের শেষে মায়োনিম (এক ধরনের নমনীয় ও সংকোচন-প্রসারণশীল তন্তু) নির্মিত দুটি পেশি-প্রবর্ধন দেহ অক্ষের সমান্তরালে অবস্থান করে। কর্ষিকায় কোষগুলো বেশ বড় ও চাপা এবং কয়েকটি করে নিডোব্লাস্ট (পরিস্ফুটনরত নিডোসাইট) ধারণ করে।
কাজ : আবরণী কোষের মতো দেহাবরণ সৃষ্টি করে দেহকে রক্ষা করে। প্রবর্ধনগুলো সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে পেশির মতো কাজ করে। মিউকাস দানা কিউটিকল ক্ষরণ করে ও দেহ পিচ্ছিল রাখে। কোষগুলো একাধিক নেমাটোসিস্ট বহন করে। একদিকে দেহাবরণ হিসেবে, অন্যদিকে পেশির মতো কাজ করে বলে এসব কোষকে ‘‘পেশি-আবরণী কোষ” বলা হয়ে থাকে।
২. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell): পেশি-আবরণী কোষের অন্তর্মুখী সরু প্রান্তের ফাঁকে ফাঁকে, গুচ্ছাকারে, মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে এসব কোষ অবস্থান করে। এগুলো গোল বা তিনকোণা এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, রাইবোজোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া যুক্ত।
কাজ: এসব কোষ প্রয়োজনে অন্য যে কোনো ধরনের বহিঃত্বকীয় কোষে পরিণত হয়। পুনরুৎপত্তি ও মুকুল সৃষ্টিতে অংশ নেয় এবং কিছুদিন পরপর অন্যান্য কোষে পরিণত হয়ে দেহের পুরনো কোষের স্থান পূরণ করে।
৩. সংবেদী কোষ (Sensory cell): এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে, সমকোণে ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে, তবে কর্ষিকা, হাইপোস্টোম ও পদতলের চারদিকে বেশি দেখা যায়। প্রতিটি কোষ লম্বা ও সরু। এর মুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ম সংবেদী রোম (sensory hair) বেরোয় এবং অপর প্রান্ত থেকে গুটিকাময় বা নোডিওল যুক্ত (nodulated) সূক্ষ্ন তন্তু নির্গত হয়ে স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত হয়।
কাজ: পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা (যেমন আলো, তাপ প্রভৃতি) গ্রহণ করে স্নায়ুকোষে সরবরাহ করে।
৪. স্নায়ু কোষ (Nerve cell): এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক নোডিওলযুক্ত সূক্ষ্ন শাখান্বিত স্নায়ুরোম নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে।
কাজ: সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে।
৫. গ্রন্থি কোষ (Gland cell): এগুলো ক্ষরণকারী দানাবিশিষ্ট এক ধরনের পরিবর্তিত লম্বাকার এপিডার্মাল কোষ। মুখছিদ্রের চারদিকে ও পাদ-চাকতিতে প্রচুর গ্রন্থি কোষ দেখা যায়।
কাজ: মিউকাস ক্ষরণ করে দেহকে কোনো বস্তুর সঙ্গে লেগে থাকতে সাহায্য করে; বুদবুদ সৃষ্ট করে ভাসতে সাহায্য করে। ক্ষণপদ সৃষ্টির মাধ্যমে চলনে অংশগ্রহণ করে এবং মুখছিদ্রের গ্রন্থিকোষের ক্ষরণে সাহায্য করে।
৬. জনন কোষ (Germ cell): এসব কোষ জননাঙ্গে অবস্থান করে। জননকোষ দুধরনের: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। পরিণত শুক্রাণু অতি ক্ষুদ্র এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক, সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখন্ড ও একটি লম্বা বিচলনক্ষম লেজ নিয়ে গঠিত। এর সাথে তিনটি পোলার বডি (polar bodies) যুক্ত থাকে।
কাজ: যৌন জননে অংশগ্রহণ করা।
৭. নিডোসাইট (Cnidocyte): Hydra-র পদতল ছাড়া বহিঃত্বকের সর্বত্র বিশেষ করে কর্ষিকার পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে বা ঐসব কোষের ভিতরে নিডোসাইট অনুপ্রবিষ্ট থাকে। কোষগুলো গোল, ডিম্বাকার বা পেয়ালাকার এবং নিচের দিকে নিউক্লিয়াসবাহী ও দ্বৈত আবরণবেষ্টিত বড় কোষ। কোষের মুক্তপ্রান্তে ক্ষুদ্র, দৃঢ়, সংবেদী নিডোসিল (cnidocil) এবং অভ্যন্তরে গহবর ও প্যাঁচানো সুতাযুক্ত নেমাটোসিস্ট বহন করে। গহ্বরটি অপারকুলাম (operculum) দিয়ে ঢাকা। আদর্শ নেমাটোনিস্টের সুতার গোড়ায় ৩টি বড় কাঁটার মতো বার্ব (barb) থাকে এবং গহ্বরটি হিপনোটক্সিন (Hypnotoxin) নামক বিষাক্ত রসে পূর্ণ। পরিস্ফুটনরত নিডোসাইটকে নিডোব্লাস্ট (cnidoblast) বলে।